দুধ-ঔষধ কেনা নিয়ে দাম্পত্য কলহের জের, রাগে জমজ দুই শিশুকে হত্যা করলেন মা
স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে মাত্র ৫ মাস বয়সী যমজ দুই কন্যা সন্তানকে পুকুরে ফেলে নির্মমভাবে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শিশুদের জন্মদাতা মা শান্তা বেগম (২২)। পারিবারিক কলহ, অভাব-অনটন ও মানসিক চাপ থেকে এই ভয়াবহ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালতে শান্তাকে হাজির করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় হত্যার দায় স্বীকার করেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার নিহত দুই শিশুর চাচা আলামিন বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপরই শিশুদের মা শান্তা বেগম ও বাবা মো. সোহাগ শেখকে আটক করে পুলিশ। মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. ফিরোজ কবির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজদিখান থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদকালে শান্তার কাছ থেকে বারবার ভিন্ন তথ্য পাচ্ছিলেন। প্রথমে স্বামীকে দোষারোপ করলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে তিনি-ই খুনের মূল হোতা। তদন্তে জানা যায়, দুই বছর আগে শান্তা ও সোহাগের বিয়ে হয়।
গর্ভধারণের পর থেকেই শান্তা বেশিরভাগ সময় বাবার বাড়িতে থাকতেন। যমজ সন্তান জন্মের পর স্বামীর বাড়িতে ফেরেন। কিন্তু স্বামীর স্বল্প আয়ে সংসার চালানো, শিশুদের দুধ-ঔষধের সংকট ও দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায়।
গত ৭ জুলাই সন্ধ্যায় স্বামীকে খাবার, দুধ ও ঔষধ আনার অনুরোধ করেন শান্তা। এতে ফোনে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। রাগের বশে শান্তা ঘরে ঘুমন্ত শিশুদের কোলে নিয়ে হেঁটে হেঁটে একপর্যায়ে ঘরের পাশের পুকুরে প্রথমে লামিয়া ও পরে সামিয়াকে ফেলে দেন। পরে নিজেই পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে শুরু করেন শান্তা। ভয় ও অনুশোচনায় দিশেহারা হয়ে স্বামীকে ফাঁসাতে নানা নাটক সাজানোর চেষ্টা করলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে স্বীকার করেন সত্য ঘটনা। পুলিশ জানায়, শান্তার দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত স্থানে তল্লাাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে শিশুদের কাপড়সহ বিভিন্ন আলামত। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চলছে।