অর্থ মন্ত্রণালয় এখন বলছে, এনবিআর বিলুপ্ত নয় বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি আলাদা বিভাগ তৈরির অধ্যাদেশ জারির পর টানা আন্দোলনের মুখে আরো পিছু হটল সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় এখন বলছে, এনবিআর বিলুপ্ত নয় বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।
সেজন্য ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ওই অধ্যাদেশে সংশোধন করা হবে। এনবিআর, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি এবং ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এখন সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসবে কিনা, আনুষ্ঠানিকভাবে তা জানায়নি।
তবে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একধরনের সমঝোতার আভাস পাওয়া গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের রোববারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রেসনোটে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সরকার আশা করেছিল যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট সার্ভিসের সকল উদ্বেগের অবসান ঘটবে। কিন্তু এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সাম্প্রতিক প্রেস রিলিজে মনে হচ্ছে, এ বিষয়ে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
সে কারণে সরকারের অবস্থান আরো স্পষ্ট করতে তিন পয়েন্টে একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।
>> জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে।
>> বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালী করা এবং একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে রাজস্ব নীতির আলাদা কাঠামো কীভাবে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।
>> জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শক্তিশালীকরণ এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়ন কার্যক্রম পৃথককরণের লক্ষ্যে আগামী ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখের মধ্যে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। সংশোধনের আগ পর্যন্ত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “সরকার আশা প্রকাশ করছে যে, এই ঘোষণার মাধ্যমে কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের সকল উদ্বেগের অবসান ঘটবে এবং দেশের রাজস্ব আহরণ ও রাজস্ব সেবা প্রদানকারী সকল দপ্তর অবিলম্বে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করবে।”
এদিকে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। সোমবার থেকে দেশের কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা। ফলে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।
তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, ওষুধ ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে পরিষদ।
গত ১২ মে রাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভাগ করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
পরদিন থেকে তা বাতিলের দাবিতে অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা। তবে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ডাক এটাই প্রথম।