স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চল শিলই ইউনিয়নে ২০২৩ সালের বহুল আলোচিত শ্যামল বেপারি হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহাদাত বেপারি (৪৬) গ্রেপ্তার হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়া থানার জিরানী বাজার এলাকায় র্যাব‑১১ ও র্যাব‑৪‑এর যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়—এ তথ্য দিয়েছেন র্যাব‑১১‑এর উপ‑পরিচালক মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৩ জুন দিবাগত রাত ২টার দিকে শিলই ইউনিয়নের পূর্বরাখি গ্রামে নিজ ঘরে একা ঘুমিয়ে থাকা শ্যামল বেপারির (৩৮) ওপর ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় শাহাদাত বেপারি, তার ভাগিনা হাবিব, ইব্রাহিম বেপারি ও মহিউদ্দিন বেপারিসহ অন্তত ১৫‑২০ জন। এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে গুরুতর আহত করে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়রা উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিনই নিহতের ভাই ইব্রাহিম বেপারি বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, ঘটনার আট দিন পর ২২ জুন শাহাদাতসহ তিনজনকে টংগিবাড়ীর কামারখাড়া এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক মাস কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে ফের পলাতক ছিলেন শাহাদাত; সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে র্যাব নজরদারি বাড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত আটক করে।
স্থানীয় সূত্রমতে, ট্রলারঘাট ইজারা, অবৈধ বালু উত্তোলন ও জমি‑সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নিহত শ্যামল ও শাহাদাতের পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ছিল।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্যামল বেপারির দুই ভাইকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায়ও শাহাদাত জড়িত ছিলেন। ওই মামলায় জামিনে মুক্ত থাকতেই শ্যামলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের অঙ্গ‑সংগঠন কৃষক লীগের সাথে সম্পৃক্ত শাহাদাত বেপারি এলাকার চাঁদাবাজি, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দীর্ঘ দু’দশক ধরে সক্রিয়। তার ছেলে মহিউদ্দিন বেপারিকে নিয়েও ১৫‑২০ জনের একটি ‘বাহিনী’ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।
নিহত শ্যামল বেপারি ২০০৪ সাল থেকে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি করতেন; ২০২২ সালের জুলাইয়ে দেশে ফেরেন। শাহাদাত বেপারির বাড়ি একই ইউনিয়নের দেওয়ানকান্দি গ্রামে।
গ্রেপ্তার‑পরবর্তী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শাহাদাত বেপারিকে গত রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।