শুক্রবার , ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আরো
  7. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  8. কলাম
  9. কৃষি
  10. খুলনা বিভাগ
  11. খেলাধুলা
  12. গণমাধ্যম
  13. চট্টগ্রাম বিভাগ
  14. জাতীয়
  15. ঢাকা বিভাগ

দুই থানার ঠেলাঠেলিতে বাস ডাকাতির তিনদিন পর মামলা, ওসি প্রত্যাহার

প্রতিবেদক
সভ্যতার আলো ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫ ১১:৫৫ অপরাহ্ণ
ডাকাতির শিকার হওয়া সেই বাস

চলন্ত বাসে ডাকাতি, নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও ‘ধর্ষণের’ অভিযোগ ওঠার তিন দিন পর অবশেষে আজ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী বাসটিতে এসব অভিযোগের ঘটনা কোন জেলার সীমানায় ঘটেছে, এই প্রশ্নে ঠেলাঠেলি চলে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর পুলিশের মধ্যে। সেটি মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের বড় কারণ বলে বলা হচ্ছে। সর্বশেষ এই ঘটনা মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রশ্নে মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

যেদিন ঘটনা ঘটেছে, তার পরদিন সকালে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। সীমানা জটিলতার কথা বলে তারা ঠেলে দিয়েছিল বাসটির চলার রুটে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দিকে।

আবার মির্জাপুর থানা থেকে বিবিসিকেও বলা হয়েছিল যে, এই ঘটনা মির্জাপুর থানার সীমান্তে ঘটেনি।

যদিও যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করেছিল। আটকদের আদালতে সোপর্দ করলেও সেদিনই সন্ধ্যা নাগাদ তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

দুই থানা পুলিশের দায়িত্বএড়ানোর চেষ্টায় তিনদিন কোনো মামলা হয়নি। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।

বাসটির চালকসহ আটকদের জামিনে মুক্তি এবং সময়মতো মামলা না নেওয়া-এ নিয়েও গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুলিশ, প্রশাসন তথা সরকারের সমালোচনা চলছে।

এমন প্রেক্ষাপটে শেষপর্যন্ত মামলা নিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোরে ওই বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় আট থেকে নয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।

এদিকে, শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে নাটোর জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে।

হাইওয়েতে ডাকাতির ঘটনা চলছেই

শুধু এটি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে– বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের গত ছয় মাসে মহাসড়কে বেশ কিছু ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ডাকাতি-ছিনতাই বন্ধের দাবিতে চলতি মাসেই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশও করেছেন যানচালকেরা।

একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় মানুষের মাঝে একধরনের ‌আতঙ্কও তৈরি হয়েছে।

ঢাকা-রাজশাহীর এই ঘটনার আগেও দেশে যে ধারাবাহিকভাবে ডাকাতির ঘটনা ঘটে চলেছে, গুগলে সার্চ করলেই সে বিষয়ে অনেক খবর দেখা যায়।

বর্তমানে হাইওয়েতে ডাকাতির সংখ্যা বেড়ে গেছে কি না, বিবিসি’র তরফ থেকে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছিলো হাইওয়ে পুলিশের কাছে। তারা সুনির্দিষ্টভাবে দিতে পারেনি। সেজন্য পুলিশ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে।

যদিও হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, পরিসংখ্যানে হাইওয়েতে ডাকাতির সংখ্যা আগের সময়ের তুলনায় বাড়েনি।

তবে ১৭ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো, যাতে বলা হয়েছিলো যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতির কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

তবে মহাসড়কে চলাচলকারী কুমিল্লা অঞ্চলের হালকা যানবাহনের চালকদের ভার্চুয়াল গ্রুপের তথ্যের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় অন্তত ১৯টি মামলা হয়েছে।

সেইসাথে, এই সময়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে কুমিল্লার চান্দিনা পর্যন্ত মহাসড়কে অন্তত ১০০ ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যার বেশিরভাগের ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়নি।

যেভাবে রাজশাহীর বাসের ডাকাতির মামলা হলো

বাস ডাকাতির এই ঘটনা ঘটে গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি, সোমবার দিবাগত রাতে।

বাসটির যাত্রীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেদিন ঢাকার গাবতলী থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসটি রাজশাহীর দিকে রওনা দিলে একদল যাত্রীবেশী ডাকাত রাত একটার দিকে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে তারা টাঙ্গাইল, গাজীপুরের কালিয়াকৈর-কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরায়।

এসময় তারা যাত্রীদের কাছে থাকা বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার, টাকা, মোবাইল ইত্যাদি লুট করে নেয়। নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং অনেক যাত্রীকে মারধরও করে।

ওইদিন রাতে যারা বাসটিতে ছিলেন, তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন, সেই রাতে সেখানে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে।

এতকিছুর পর রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডাকাতরা নন্দন পার্ক এলাকায় বাস থেকে নেমে যায়।

ডাকাতরা চলে গেলে যাত্রীদেরই একজনের ফোন থেকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানালে টহল পুলিশ এসে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ জানাতে বলে।

যাত্রীরা তখন বাসটি নিয়ে মামলা করার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় যান, কিন্তু থানায় মামলা নেওয়া হয়না। বিবিসি বাংলাকে এমনটাই জানিয়েছিলেন বাসের যাত্রী সোহাগ হোসেন।

ওই বাসের একজন যাত্রীর ভাষ্যমতে, পুরো বাসে একটিই ফোন “ভাগ্যক্রমে” রয়ে গিয়েছিল, বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তা ডাকাতদের নজরে আসেনি।

এদিকে, আজ মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এইচ. এম. মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ঘটনার পরদিন ভোরে যাত্রীরা মির্জাপুর থানায় এসেছিলো।”

“কিন্তু তারা এসেই চলে গেছে। আসলে তারা কেউ এখানকার স্থানীয় নয়। তারা আমাদেরকে জানিয়েই তাড়াহুড়ো করে চলে গেছে। ডিউটি অফিসার তাদেরকে লিখিত দিতে বলেছিলো। কিন্তু তারা অপেক্ষা করে নাই।”

“আমরা জানার পরে পুরো জিনিসটা পর্যালোচনা করেছি যে এটা কোথায় কোথায় হতে পারে। এরপর আমরা নিজেরা টিম পাঠিয়ে যাত্রীদেরকে নিয়ে আসি।”

যদিও মির্জাপুর থানার ওসি মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, “মির্জাপুর সীমানায় এটা ঘটেনি। আর এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানায় কেউ লিখিত, মৌখিক এবং এমনকি মোবাইল ফোনেও কোনো অভিযোগ করেনি।”

যাত্রীরা জানিয়েছেন, মির্জাপুর থানা অভিযোগ না নেওয়ায় পরদিন ১৮ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে তারা নাটোরের বড়াইগ্রামে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় বাসটিকে আটকে দেন।

তারপর বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় চালকসহ ওই তিনজনকে আটকও করেন। কিন্তু এই ঘটনায় তখনও কেউ কোথাও মামলা না করায় ওইদিনই জামিন পেয়ে যান তারা।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম গতকাল বিবিসিকে বলেছিলেন, তারা মির্জাপুর বা গাজীপুরে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন, “কারণ ঘটনা সেখানে ঘটেছে”।

এছাড়া, মামলার বাদী ওমর আলীর সাথে আজ কথা বলে জানা যায়– এদিন ভোরে তিনি, সোহাগ হোসেন ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার আবু হানিফ পুলিশের গাড়িতে করে বড়াইগ্রাম থানা থেকে মির্জাপুর থানায় আসেন এবং এরপর মামলার এজাহারে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে তিনি আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার এজাহার তাকে পড়ে শোনানো হয়নি। তবে দুপুরে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে।

ডাকাতির শিকার হওয়া সেই বাস

ডাকাতির শিকার হওয়া সেই বাস

মামলার এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই

মামলার এজাহারের কপি বিবিসি বাংলা’র হাতে এসেছে। সেখানে ধর্ষণের কথা উল্লেখ নেই।

এ বিষয়ে মির্জাপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মি. সিদ্দিকী বলেন, “তারা এ নিয়ে অনেকগুলো যাত্রীর সাথে কথা বলেছেন। মহিলার সাথেও নাটোর পুলিশ কথা বলেছে।”

“আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখানে ধর্ষণের যে ব্যাপারটা, ওটা সরাসরি আসেনি। শ্লীলতাহানির বিষয়টাই আসছে। তাকে অত্যাচার করা হয়েছে। মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ধর্ষণ যেটা, সেটা আমরা পাইনি,” যোগ করেন তিনি।

পুলিশের এই কর্মকর্তার মতে, “ওরকম একটা ঘটনার পর পর একেকজন একেকভাবে উপস্থাপন করতে পারে।”

এ বিষয়ে জানতে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, “দুই বা তিনজন ডাকাত গাড়িতে থাকা দুই বা তিনজন অজ্ঞাতনামা মহিলা যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করিয়া শ্লীলতাহানি করে।”

সেখানে বলা হয়েছে, ওই রাতে ডাকাতরা যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, রূপা ও মোবাইলফোনসহ সর্বমোট পাঁচ লক্ষ ২৬ হাজার ৬০০ টাকা লুণ্ঠন করে।

তবে এজাহারে ধর্ষণের কথা উল্লেখ না থাকলেও গতকাল একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী তথা যাত্রী বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা নিজেদের চোখে না দেখলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

হাইওয়ে পুলিশের সীমাবদ্ধতা কোথায়

মহাসড়কে এই ধরনের ঘটনা ঘটার পরও কোনো বড় ধরনের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, হাইওয়েতে ডাকাতির সংখ্যা বেড়েছে বলা যাবে না। তবে এখন যেহেতু “শীতের সময়, তাই কুয়াশার কারণে হয়তো সড়ক দুর্ঘটনা এখন একটু বেশি হচ্ছে,” বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“গার্মেন্টস অসন্তোষের জন্য মাঝে মাঝে হাইওয়ে বন্ধ থাকে, পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বন্ধ থাকে। কিন্তু এগুলো তো আসলে হাইওয়ে’র অংশ না,” বলেন তিনি।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাইওয়ে পুলিশের কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে জানিয়ে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি বলেন, “আগে আমরা তিন থেকে চারটা চক্কর দিতে পারতাম। কিন্তু আন্দোলনের সময় আমাদের ১১টা থানা-ফাঁড়িতে আগুন দিয়েছিলো।”

“তারপর আমাদের গাড়ি পুড়িয়ে দিছে। আমাদের অস্ত্রপাতি লুট করেছে। আর সামগ্রিকভাবে পুলিশ তো একটু ব্যাকফুটে চলেই গেছে। পুলিশের ভেতর ওই মোরালটা (মনোবল) নাই। আগের মতো করে প্রয়োগ করবো, সেটা এখন হচ্ছে না,” তিনি যোগ করেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - মুন্সীগঞ্জ