বুধবার , ৬ আগস্ট ২০২৫ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া
  7. এক্সক্লুসিভ নিউজ
  8. কলাম
  9. কৃষি
  10. খুলনা বিভাগ
  11. খেলাধুলা
  12. গজারিয়া
  13. গণমাধ্যম
  14. চট্টগ্রাম বিভাগ
  15. জাতীয়

সংবিধানে যুক্ত হবে জুলাই ঘোষণাপত্র, আন্দোলনকারীরা পাবে আইনি সুরক্ষা, শহিদরা জাতীয় বীর

প্রতিবেদক
সভ্যতার আলো ডেস্ক
আগস্ট ৬, ২০২৫ ১:৫১ পূর্বাহ্ণ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা মারা গেছেন, তাদের জাতীয় বীর এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা পাবে আইনি সুরক্ষা। এছাড়া এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলবার জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং এই ভূখণ্ডের মানুষের সংগ্রামের নানা ধাপ তুলে ধরা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের নানা কর্মকাণ্ড এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ত্যাগের বিষয়গুলোও উঠে আসে।

এছাড়া, সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কারের কথাও রয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্রে।

জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল।

এরপর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় কয়েক দফা বৈঠক করে এই কমিশন।

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবস’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে সকাল থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ জড়ো হন।

বিকেল পাঁচটায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

জাতীয় সঙ্গীত ও জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের উদ্দেশ্যে নিরবতা পালনের পর জুলাই ঘোষণা পত্র পাঠ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা।

ঘোষণাপত্রের শুরুতেই উপনিবেশ বিরোধী লড়াই থেকে পাকিস্তানের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এই ভূখণ্ডের মানুষের রুখে দাড়ানোর ইতিহাস এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রনয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল।”

তিনি বলেন, “স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে।”

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের তফসিলে এ জুলাই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণ অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো”।

বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার কথাও ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে।

এছাড়া, দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যুক্তিসঙ্গত সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের কথাও বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রে।

এছাড়া, বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের সময় এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের কথাও বলা হয়।

ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় দফায় দফায় বৈঠক

জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে আলোচনায় জুলাই সনদের প্রসঙ্গটি। বিশেষ করে গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পাঁচই অগাস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রায় পাঁচ মাস পরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করলে তখন এ নিয়ে রাজনীতিতে নানা আলোচনা শুরু হয়।

পরে গত ৩০শে ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের উদ্যোগের খবর জানানো হলে কর্মসূচি থেকে সরে আসেন গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা।

এ বছরের সাতই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংস্কার কমিশনগুলোর দেয়া প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আলোচনা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ঐকমত্য কমিশন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সরকার ঘোষণাপত্রের খসড়া করে। তখন এর ওপর ৩২টি দলের মতামতও গ্রহণ করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তখন একটি খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরিও করেছিল। অন্যদিকে বিএনপিও একটি খসড়া তৈরি করেছিল।

এরপর এ নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তুত করে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তা নিয়ে কয়েক দফায় মতামতও চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে নানা মত পার্থক্য থাকায় কয়েক দফায় সংশোধনী প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে।

তবে, এই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে যুক্ত করা নিয়ে শুরু থেকে দুই ধরনের মত ছিল বিএনপি এবং এনসিপি ও জামায়াতের মধ্যে।

বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, জুলাই ঘোষণাকে সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে যুক্ত করতে চায় তারা। পুরো ঘোষণাপত্র নয়, অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি হিসেবে একটি অনুচ্ছেদ এবং ঘোষণাপত্রের উল্লেখ থাকবে।

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রস্তাব ছিল সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকুক। পুরো ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার দাবি ছিল।

আর জামায়াতও চায় এর সাংবিধানিক ভিত্তি, সেটি যেভাবেই হোক তাতে খুব বেশি আপত্তি নেই দলটির।

সূত্র: বিসিসি বাংলা

সর্বশেষ - মুন্সীগঞ্জ