অনলাইন রিপোর্ট: জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির জন্য এখন থেকে এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে—এমনই যুগান্তকারী রায় দিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, অতীতে কোন দেশ কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করেছে, তাও বিবেচনায় আনা যাবে।
বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এই রায় দিয়েছে।
যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব হতে পারে অত্যন্ত গভীর।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এই রায় একটি বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এসব দেশ এখন আইনি পথ বেছে নিতে পারবে।
২০১৯ সালে প্যাসিফিক অঞ্চলের কয়েকজন তরুণ আইন শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগের মাধ্যমে মামলাটির সূচনা হয়। তাদের একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে। বুধবার আদালতের রায় ঘোষণার সময় তিনি হেগে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এই জয় আমাদের সমাজের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, তার স্বীকৃতি আদালত দিয়েছে।
ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেই সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের দীর্ঘদিন উপেক্ষা করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি রায়ে বলেন, কোনো দেশ যদি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাযথ উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা গ্রহণ না করে, তবে তা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যেসব দেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে গেছে (যেমন—যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পরিবেশ রক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রায়ে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে প্রমাণ করা যায়, তাহলে সেটির জন্যও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে। এ ছাড়া, কোনো দেশ যদি জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে নতুন লাইসেন্স দেয় বা এসব খাতে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আন্তর্জাতিক আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই রায় সরাসরি বাধ্যতামূলক না হলেও, জাতিসংঘ আদালত বা জাতীয় আদালতে মামলার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে আইসিজেতে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেমন—যুক্তরাজ্য এটি স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখনো করেনি।