( বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রচিত এবং ওনার প্রতি নিবেদিত))
কবি:: সুস্নাত বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রজ্জ্বলিত হোক সেই উদ্ধত ছায়া,
নির্মলতাহারা আলো থেকে যে বিমুখ,
ভরো বিভ্রান্ত ছায়াপাত্র, রক্তপ্লাবি এক অভিলাষে।
আপন ছায়ার ঘূর্ণিপাকে জড়ায় অচিন আত্মা,
ডুবুক সে হৃদয়, যেথা অনিঃশেষ যন্ত্রণার সমুদ্র। ((প্রথম স্তবক))
যেখানে প্রেম মানে আকুতি নয় শুধু,
এক অস্তিত্বের শেষ টুকরো দীপ্তি।
সেখানে আমি খুঁজি একজন মানুষ,
যে ভালোবাসে তার কণ্ঠের আগুনে। ((দ্বিতীয় স্তবক))
নয় মাথা নোয়ানো প্রার্থনা,
নয় অন্ধ অনুসরণে বিকিয়ে যাওয়া দিন,
চাই এমন এক কণ্ঠ—
যে ভালোবাসার নামে ঝড় তোলে। ((তৃতীয় স্তবক))
সে যেন আসে ছিন্নমূল পায়ে,
চোখে না থাকে অতীতের ধোঁয়া,
জন্ম নিক সে আজকের ধুলোয়—
ভাঙা স্বপ্নে, ক্ষুধার ভাষায়। ((চতুর্থ স্তবক))
যে পুরুষ বা নারী হোক সে—
হোক প্রেমিক, যোদ্ধা, দগ্ধ আত্মা,
সে যেন স্পর্শ করে আমার হৃৎপিণ্ড,
যেখানে আজও ব্যথা মানে মানবতা। ((পঞ্চম স্তবক))
এই শহর—আলোয় মোড়া শবাগার,
এখানে শব্দ মানে ক্রয়যোগ্য ক্ষণ।
এই সমাজ—সুগন্ধি আঁধার,
যেখানে প্রেমও বোঝা যায় নিঃস্বরণের মূল্যে। ((ষষ্ঠ স্তবক))
কোথায় সেই আগুন-শিশু,
যে স্পর্শ করেছিল ক্ষুধিত জাগরণ?
কোথায় সেই দুর্বিনীত করুণ-দৃষ্টি,
যা আজও পোড়ায় বিবেকের খাঁচা? ((সপ্তম স্তবক))
সে কি হারিয়ে গেছে ইতিহাসের গলিতে?
না কি রূপান্তরিত হয়েছে আমাদেরই নিঃশব্দতায়?
আমরা কি তাকে ভুলেছি,
নাকি নিজেরাই হয়ে গেছি নিষ্পন্দ, নিরুপায়? ((অষ্টম স্তবক))
আমি দেখি তার ছায়া—
এক বৃষ্টিহীন কালো আকাশে।
যেখানে প্রতিটি বাজ পড়ে হৃদয়ে,
আর সাড়া দেয় না কেউ, এমনকি প্রেমও না। ((নবম স্তবক))
সে যদি আসে,
তবে আসুক শব্দহীন চোখে,
আসুক ভাঙা ইটের বুক চিরে,
আসুক রক্তের দাম জানে এমন ভাষায়। ((দশম স্তবক))
হোক না সে ক্লান্ত, বিদীর্ণ,
হোক না তার ছন্দে ঝড় নেই,
তবুও সে হবে সত্য—
এই যন্ত্রণা-ক্লিষ্ট সময়ের একমাত্র স্বর। ((একাদশ স্তবক))
প্রেমে তার থাকবে শৃঙ্খল ভাঙার শব্দ,
আঘাতে থাকবে আশ্চর্য কোমলতা।
তার চোখে দেখা যাবে—
ভবিষ্যতের অনাগত জন্মবেদনা। ((দ্বাদশ স্তবক))
সে বলবে না, “আমি এসেছি,”
সে শুধু জ্বলে উঠবে চোখে—
এক নিঃশব্দ আগুনের মত,
যা পোড়াবে বিষণ্ণতা ও ভীরুতা। ((ত্রয়োদশ স্তবক))
আমি চাই, সে ফিরে আসুক আজ,
না কাব্য হয়ে, না ইতিহাস হয়ে—
মানুষ হয়ে, মাটি হয়ে,
চোখের পলকে, দৃষ্টির অভিপ্রায়ে। ((চতুর্দশ স্তবক))
আমরা তাকে দেখি প্রতিটি প্রতিবাদে,
প্রতিটি ভালোবাসায় যা লালন করে স্পর্ধা।
সে আজকের দরকার,
যেখানে প্রেমও অভিমান জানে না আর। ((পঞ্চদশ স্তবক))
ভালোবাসা চাই, কিন্তু নির্জন নয়—
একসাথে জ্বলতে চায় এমন হৃদয়,
যা রচনা করবে নতুন মানবতা,
যেখানে প্রতিটি কষ্ট হবে প্রতিজ্ঞা। ((ষষ্ঠদশ স্তবক))
সে ফিরুক সেই চুপচাপ ধ্বনিতে,
যেখানে একা একটি কবিতা
সমস্ত সভ্যতাকে জাগিয়ে দিতে পারে। ((শেষ স্তবক))
ReplyForward
|