মোঃ মাসুদ খানঃ
মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুনির্দিষ্ট এই অভিযোগে দেখা যায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৩ টাকা অনিয়মের অডিট আপত্তি এসেছে। অডিট
সুপারিশে বলা হয়েছে- আপত্তি সংক্রান্ত অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করা প্রয়োজন এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ২০২৩-২০২৪ সালের এই অডিট আপত্তি নিয়ে এই উর্ধতন মহলের চিঠি চালাচালি চলছে। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন আলোচনা চলছে এই
সিভিল সার্জনের খুঁটির জোর কোথায়? বিগত সরকারের সময়ে নানা সুবিধা নেওয়া এই সিভিল সার্জন এখনও বহাল তবিয়তে। এই সিভিল সার্জন আদালতে রিট করে তার বদলির আদেশ ঠেকিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে নিয়োগের বড় বাণিজ্য করতে সিভিল সার্জন আদালতের মাধ্যমে তার বদলির আদেশ ঠেকিয়ে দিয়েছেন।
রিট করে বদলি স্থগিত
মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার মঞ্জুরুল আলম হাইকোর্টে রিট করে তার বদলির আদেশ স্থগিত করিয়েছেন। ২০২৪ সালের ৭ জুলাই তার বদলির আদেশ আসে। তাকে মুন্সীগঞ্জ থেকে খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ের (স্বাস্থ্য) সহকারী পরিচালক (প্রশাসক) পদে বদলি করা হয়। একই সাথে নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা খানমকে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ডা. সাজেদা সে সময় মুন্সীগঞ্জে সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিতে আসলে চতুরতার সাথে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন তার কাছ থেকে সময় নিয়ে যোগদানের জন্য একটি তারিখ বলেন। এর আগে তিনি হাইকোর্টে গিয়ে একটি রিট দায়ের করেন। রিট করে তিনি আদালত থেকে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে থাকার আদেশ নিয়ে আসেন। আর এই নিয়ে চলছে নানা রসালো আলোচনা। কেন তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হলো মুন্সীগঞ্জে থাকতে? হাইকোর্টে রিট করে বিভাগীয় শহরে বদলী ঠেকিয়ে ছোট একটা জেলায় থাকতে হলো কেন। কী মধু আছে মুন্সীগঞ্জে? তবে কি সামনে বিশাল জনবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে তিনি মুন্সীগঞ্জে রয়ে গেলেন। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, অফিসে গিয়ে বদলি আটকাতে গেলে দেরি হয়ে যেতো। তাছাড়া আমার চাকুরীর মেয়াদ অল্প সময় থাকায় একইস্থানে আমার থাকার আইনগত অধিকার আছে। তাই আদালতে যেতে হয়েছে। এদিকে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে বদলী হয়ে আসার পর যোগদান করতে না পারা ডা. সাজেদা খানম দুঃখ করে জানান, তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে মানবিক কারণে তিনি ঢাকার আশপাশে আসার আবেদন করেন। তার আবেদন মঞ্জুরের পরও তিনি যোগদান করতে পারেননি। যোগদানের জন্য তার থেকে সময় নিয়ে পরে রিট করে বসেন। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন হিসেবে বদলী করে।
পিআরএল-এ থাকা কর্মকতার
স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ
পিআরএল-এ থাকা সিভিল সার্জন অফিসের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর গাজী মোহাম্মদ আমীনকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক ও হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম। তবে সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলম এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ধরণের কোন নিয়োগ আমি দেইনি। কাগজ থাকলে সেটি ভুয়া হতে পারে।” তবে গাজী মোহাম্মদ আমীন সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম কর্তৃক নিয়োগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর এর পিআরএলকালীন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক ও হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ কমিটিতে না থাকলেও সিভিল সার্জনের পক্ষে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রায় সব কাজই করছেন গাজী মোহাম্মদ আমীন। প্রার্থী যাচাই বাছাইসহ নানা কাজে ব্যস্ত তিনি।
নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
আগামী মে মাসে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪২ পদে নিয়োগ হতে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের ১১ জুলাই সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জু-রুল আলমের পিআরএল এ যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিয়োগ সম্পন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। তবে কোন প্রকার নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত না থাকার দাবি করে সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমি নিয়োগ কমিটির কেউ না আমি একজন মেম্বার মাত্র।’ কিন্তু সিভিল সার্জন অফিসের নিয়ন্ত্রাধীন রাজস্ব খাতের এই নিয়োগ কমিটির সব কাজই করছে তার দফতর।
১৪ লাখ টাকার অডিট আপত্তি
মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে ১৪ লাখ টাকার অডিট আপত্তি ওঠে। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক থাকা অবস্থায় ‘৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (4th HPNSP) আইডিএ ক্রেডিট নং-৬১২৭ বিডির আওতায় স্বাস্থ্য অডিট অধিদফতর কর্তৃক নিরীক্ষিত ২০২৩-২৪ চূড়ান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আপত্তি করা হয়। অডিট রিপোর্টে বলা হয়, আপত্তি সংক্রান্ত অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করা প্রয়োজন। এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। অডিটের ১৯৩ নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- ৬ লাখ ১০ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং ১৯৪ নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫ শ’ টাকা অনিয়ম রয়েছে। অডিট সুপারিশে বলা হয়েছে- আপত্তি সংক্রান্ত অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করা প্রয়োজন এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ৪র্থ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি আইডিএ ক্রেডিট নং ৬১২৭ বিডির আওতায় স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষিত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের চূড়ান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের উঠে এসেছে সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক থাকা অবস্থায় অনিয়মের নানা বিষয়। হাসপাতালটির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. আহমেদ কবির জানান, এই আপত্তির সুরাহা না হলে অভিযুক্তের পেনশন থেকে টাকা কর্তন হবে।