মোঃ নাজমুল ইসলাম পিন্টু:.
২৩ জুন বেলা তখন সাড়ে বারোটা। দুপুরের রোদ একটু একটু করে তীব্র হচ্ছিল। মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিদিনের মতোই শিক্ষার্থীদের চেনা ব্যস্ততা। হঠাৎ দেখা গেল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের গাড়ি এসে দাঁড়াল স্কুলের গেটে।
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছিল না, আমন্ত্রণও ছিল না — ছিল কেবল একজন প্রশাসকের মন থেকে উঠে আসা আন্তরিক উদ্যোগ। প্রশাসনিক নানা ব্যস্ততার মাঝেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি মিশে তাদের পড়ালেখার অগ্রগতির খোঁজ নেওয়ার মানসিকতা থেকেই হঠাৎ এই উপস্থিতি।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রথমে খানিকটা অবাক হলেও ইউএনও’র আন্তরিক আগ্রহ দেখে দ্রুতই শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ক্লাসের প্রস্তুতি নিতে বলেন। মুহূর্তেই দশম শ্রেণীর বি শাখায় প্রবেশ করলেন তিনি। নিজের সরকারি পোশাকেই ইউএনও দাঁড়ালেন বই হাতে শ্রেণী কক্ষে। শুরু হলো ১০ মিনিটের ইংরেজি প্রাণবন্ত ইংরেজি ক্লাস। এপর তিনি চলে গেলেন ৮ম শ্রেণীর বি শাখায়। সেখানে সাধারন বিজ্ঞান ক্লাস নিলে ১০ মিনিট। শিক্ষার্থীরা অপরিচিত শিক্ষককে ক্লাসে দেখে কিছুটা বিচলিত হলেও পরে পরিচয় পেয়ে হয়ে যান স্বাভাবিক।
শ্রেণিকক্ষে ইউএনও বলেন—“ইংরেজি কেবল একটি বিষয় নয়, এটি একটি দক্ষতা। বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয় চলে এসেছে, কিন্তু বিশ্বকে জানার জন্য ইংরেজির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমরা যদি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে পারি, তবে আমাদের যে কোনো স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে। ”ক্লাসে তিনি ইংরেজি শব্দের উচ্চারণ, বাক্য গঠন এবং দৈনন্দিন জীবনে ইংরেজি চর্চার সহজ পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেন। শিক্ষার্থীদের তিনি প্রশ্ন করেন, তাদের পড়াশোনার আগ্রহ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। উত্তরে কেউ শিক্ষক, কেউ ডাক্তার, কেউবা পুলিশ অফিসার হতে চায় বলে জানায়।
তাদের এই আগ্রহ দেখে ইউএনও বলেন—“প্রশাসনিক কাজের ফাঁকে যদি প্রতিদিন এক ঘণ্টা সময় পেতাম, তাহলে শিক্ষক হয়ে তোমাদের আরও ভালোভাবে গড়ে তুলতাম।”
শুধু ক্লাস নেওয়া নয়, ক্লাস শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা দেন এবং শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলেন। ইউএনও’র এই আকস্মিক উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যেমন মুগ্ধ, তেমনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অভিভাবকরাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন—“এমন উদ্যোগের ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন উদ্বুদ্ধ হয়, তেমনি সমাজে শিক্ষা নিয়ে আরও সচেতনতা তৈরি হয়। প্রশাসনের এমন সরাসরি অংশগ্রহণ আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক।”
একজন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন—“ইউএনও স্যার এত সহজভাবে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন যে আমরা খুব আত্মবিশ্বাসী বোধ করছি। এখন থেকে আরও বেশি করে ইংরেজি চর্চা করবো।”ক্লাস শেষে ইউএনও আবার নিজের প্রশাসনিক কাজে ফিরে যান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মনে রেখে যান ২০ মিনিটের এক অনুপ্রেরণার গল্প।
আজকের দিনে, যখন প্রশাসনের ব্যস্ত কর্মসূচির ভিড়ে মানবিক সংযোগ প্রায় দুর্লভ, তখন টঙ্গীবাড়ীর এই ইউএনও’র এমন ‘২০ মিনিটের শিক্ষকতা’ হয়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী এক উদাহরণ।
মোঃ নাজমুল ইসলাম পিন্টু,
টঙ্গীবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ।
মোবাইল : 01795594439