সুস্নাত বন্দ্যোপাধ্যায়
(হাবড়া, উত্তর-২৪-পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ)
প্রবল বিরক্তিতে হাঁফিয়ে ওঠা
জীবনের এই নিথর নিশ্বাস,
জোর করে কেড়ে নিয়ে যারে
তুই আপনার উদ্ধত অধিকারে,
অবিশ্রান্ত আনন্দস্রোতে উন্মত্ত মহাকাশপারে
দুর্নিবার বন্ধন ছিঁড়ে ঘুমন্ত বলের,
সংঘর্ষে ঘর্ষণবীণা বাজিয়ে বাজিয়ে
আমাকে ভ্রমণ করা সে পথে,
যে পথে মন তোর বেড়াতে চায় ঘুরে ঘুরে।
বন্য সঙ্গীতে তোর বৈচিত্র্যহারা হৃদয়ের সুর এ আমার!!
ঝংকার তোল, তাতে ঝংকার তোল।
যতক্ষণ না ধ্বংস হয়, হয় ধুলিস্যাৎ,
চাপিয়ে দেওয়া সমাজের তথাকথিত পাথর।
হে আমার উল্লাসের উদ্ভান্ত ঈগলবলাকা ওরে!!
অবতরণ করা সব তারাদের অসফল স্বপ্নের বাসনা,
আমাদের অসত্য সুখ ঢালা পৃথিবীর প্রাণে।
জানি আমি তোর সেই সংঘর্ষ ছুঁয়ে আছে,
আদিম চোখের এক বিবর্ণ কঠোর পর্দা!! (প্রথম স্তবক)
নক্ষত্রের সেই স্বপ্নদের তুই বারংবার কর আহবান।
ঝঞ্ঝার ঝাপটে তোর করাল পাখার
তাদের যন্ত্রণা তুই খন্ডক্ষুদ্র কর।
রুদ্রদেবতা গান গেয়ে যায় তোর ও ডানায়। (দ্বিতীয় স্তবক)
মাঠে মাঠে ঘুরে ঘুরে আমার দুটো পা ক্লান্ত হয়ে গেছে।
ধূসর ধোঁয়ার মরু যার কোলে
ঝলমল করছে এক আলোর পুকুর,
তার জলে কত রূপকথা রোজ করে জলপরীদের গল্প!!
যদি ওই জলে নেমে পারতাম স্নান করতে আমি,
ভেজাতে পারতাম এই রুক্ষ শরীর
তবে আমি দেখতিস
ঠিক তোর পাখনা ধরে নিজেকে তার সাথে ঝুলন্ত করে উড়িয়ে দিতাম। (তৃতীয় স্তবক)
তোর উড়ে যাওয়া ডানার রথের চাকায়।
ধেয়ে যায় দিশাহারা বস্তির অনাথ অভুক্ত শিশুদের উন্মাদনা।
তবু সেই শিশুদের কঙ্কালসার অপুষ্ট চোখে
দেখেছি আমি অলৌকিক দিব্যজ্যোতি!!
বল রে বলাকা ওরে সে বুঝি তোর হিংস্র চোখের ঝলস?? (চতুর্থ স্তবক)
আজও সেই শিশুদের বিদ্রুপের ভঙ্গিমা
সুচতুর কুটিল তবু প্রাণোচ্ছল হাসি,
তোর আনন্দমগ্ন আকাশের অনন্তঊর্ধমুখে ফুটে উঠুক।
উজ্জ্বল প্রথম প্রভাতের জীবন্ত কোমল রঙ
এঁকে দে তুই সেই হাসি ওই শুভ্রস্মিত মেঘের খাতায়। (পঞ্চম স্তবক)
দুর্বল ভেবে, কখনও বা অলস
পতঙ্গ ভেবে, অবজ্ঞা করেছি সেই শিশুদের।
সবশেষে বুঝেছি আজ তাদের প্রেমই পবিত্র সবচেয়ে,
সবচেয়ে তাদের আনন্দের নেশা মদির নির্মল।
ক্ষণিকের সুখের বিমোহে আমি হয়েছি কাতর,
তাই তাদের মত্ততা তুই নিয়ে আয় আমার এই বুকে। (ষষ্ঠ স্তবক)
ওরে আয় নিয়ে আয় লুণ্ঠন করে তাদের আত্মার নৃত্যের ঘুঙুর,
আয় সেই পাহাড়ি শিঞ্জিনী পরে বাকিটা জীবন নাচি তোর সাথে,
দুর্দান্ত দুরন্ত অন্তরীক্ষের অঞ্চলঅঙ্গনে।
আয় ভরিয়ে দিই সারথি হয়ে তোর খুশির স্ফুলিঙ্গে,
বসুধার জীব আর জড়দের অন্তরের অপূর্ণ মানসসংসার।(শেষ স্তবক)