হামাস একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আরও জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। শনিবার আবার শুরু হওয়া আলোচনার পর তারা এ প্রস্তাব দিয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর উভয় পক্ষের মধ্যে এ আলোচনা শুরু হলো।
ফিলিস্তিনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি এবং দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে নয় জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস।
ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত নতুন চুক্তিতে প্রতিদিন চারশো ত্রাণবাহী ট্রাকের গাজায় প্রবেশ এবং অসুস্থ বা রোগীদের গাজা থেকে বের করে আনার কথা বলা হয়েছে।
জবাবে ইসরায়েল হামাসের হাতে এখনো আটকে থাকা সব জিম্মি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দাবি করেছে।
দোহায় দুই পক্ষের আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবিত চুক্তি সম্পর্কে ইসরায়েল এখনো প্রকাশ্যে কোন মন্তব্য করেনি।
তবে তারা এই আলোচনার আগে জানিয়েছে যে, তারা গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার বা যুদ্ধ বন্ধের কোন অঙ্গীকার করবে না।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে, যার নাম অপারেশন গিডেওনস’ চ্যারিওটস।
অভিযানে বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় তিনশ মানুষ নিহত হয়েছে। গত ১৮ই মার্চ থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে।
সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। কারণ ইসরায়েল খাদ্য ও অন্য সাহায্য সেখানে যেতে দিচ্ছে না।
এর আগে হামাসকে ধ্বংস করতে ও গাজার দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযানের কথা বলেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গাজা থেকে সাংবাদিক ঘাদা আল কুর্দ বিবিসি নিউজ আওয়ার প্রোগ্রামে সেখানে ব্যাপক হামলার বর্ণনা দিয়েছেন।
ত্রাণ সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছে। ফুটেজগুলোয় ইসরায়েলের অবরোধের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, গাজায় বহু মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না। ইসরায়েল সরকার বারংবার গাজায় খাদ্য সংকটের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিপর্যয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল থেকে ব্রিটিশ চিকিৎসক ভিক্টোরিয়ো রোজ বিবিসি রেডিও ফোর এর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেছেন, তার টিম অবসন্ন হয়ে পড়েছে এবং কর্মীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওজন হারিয়েছেন।
“শিশুরা খুবই লিকলিকে হয়ে পড়েছে। আমরা অনেককে পেয়েছি যাদের দাঁত পড়ে গেছে। অনেকে পুড়ে আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ইনফেকশনের প্রবণতা আছে”।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গত পাঁচই মে বলেছেন, তারা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ওই অঞ্চলে তার সফর শেষ করেছেন।
আইডিএফ বলেছে, সব জিম্মির মুক্তি এবং যতদিন হামাসকে আর কোন হুমকি মনে না হবে, ততদিন তাদের অভিযান চলবে।
ওই দিনই উত্তর ও মধ্য গাজার অধিবাসীদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় শিবিরে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু অনেকেই কয়েক দফায় ঘরবাড়ি হারানোর কারণে এটিকে অসম্ভব বলছিলেন ত্রাণ কর্মীরা।
শনিবার উত্তর গাজার বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে। এর মধ্যে বেইত লাহিয়া ও জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরও আছে।
আগামী কয়েকদিনে হাজার হাজার ইসরায়েলি সেনা গাজায় প্রবেশ করতে পারে। সীমান্তে ট্যাংক জড়ো হওয়ার খবর দিয়েছে রয়টার্স।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় নেতারা ব্যাপক অভিযানের নিন্দা করেছেন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার কমিশনার জেনারেল ফিলিপ্পে লাজ্জারিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেছেন, “বোমা, ক্ষুধা ও ঔষধ সংকটের মাধ্যমে আর কত ফিলিস্তিনির জীবন নিশ্চিহ্ন করা হবে?” “নৃশংসতা একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে”।
নতুন করে হামলার পর জাতিসংঘ মহাসচিব, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ইটালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছেন।
হামাস ২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা করে বারশো জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে নেওয়ার পর গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
তাদের অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা