খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে প্রবাসী কিছু নেতাকর্মী হিথরো বিমানবন্দরের বাইরে অবস্থান করছেন।
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা ৫ মিনিটে(বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টা) খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
লন্ডন বিএনপির জেনারেল সেক্রেটারি কয়সর আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে খালেদার লন্ডনে পৌছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিমান বন্দরে টার্মিনালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাগত জানান ছেলে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান।
সেখানে সাত বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ হয়।
এদিকে বিএনপি লন্ডন শাখা থেকে বিমানবন্দরে প্রবাসী বাংলাদেশী নেতাকর্মীদের সমবেত না হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অনুরোধ করার পরও কিছু নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে একনজর দেখতে বিমানবন্দরে গেছেন। লন্ডনে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেই বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষায় আছেন তারা।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে যান।
মালেক বলেন, বিমানবন্দরে তিনিসহ লন্ডন বিএনপির জেনারেল সেক্রেটারি কয়সর আহমদ ও জিয়া ফাউন্ডেশনের ইউরোপীয় কো-অর্ডিনেটর কামাল উদ্দিন আছেন।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় খালেদা জিয়ার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়াই চূড়ান্ত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভর্তি হবেন ‘লন্ডন ক্লিনিকে’, যেখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে যান।
এর আগে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, হিথরো বিমানবন্দর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরাসরি লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
এর আগে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে লন্ডন যাত্রা করেন খালেদা জিয়া।
কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতির লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হয়।
এ সময় কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক খোঁজখবর নেন বলে জানান খালেদা জিয়ার সাথে থাকা তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
সবশেষ সাড়ে সাত বছর আগে যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
সেই কারণে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের লন্ডনযাত্রার পর আর কোনো বিদেশ সফর হয়নি।
ওই সময় লন্ডন গেলে তিনি তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবার এবং মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। অসুস্থ নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে টানা আন্দোলন করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবুও সরকারের অনুমতি মেলেনি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাঁচ মাস বাদে সেই পথ সুগম হয়। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হয়।