স্টাফ রিপোর্টারঃ
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্য হিসেবে ৩০ বছরের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় নতুন প্রত্যয়ে যুক্ত হলেন মেজর (অব.) মাসুদুর রহমান কাইয়ুম। চলতি বছরের ৬ জুন তাকে ৫৯ সদস্যবিশিষ্ট মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে দলটি লৌহজং-টঙ্গিবাড়ি তথা মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে নতুন উদ্দীপনা ও আশার বাতিঘর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মৌলিক লক্ষ্য হিসেবে তিনি তুলে ধরেছেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্ভীক পরিবেশে জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতি তার প্রশ্নাতীত আনুগত্য এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে তিনি সারা জীবন দেশ ও জনগণের সেবায় নিবেদিত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
সেনা জীবনের উল্লেখযোগ্য অধ্যায়
মেজর কাইয়ুম ১৯৯০ সালের ২২ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে (দ্য পাইওনিয়ারস) কমিশন লাভ করেন। তার কর্মজীবনে তিনি নানা গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ও সদর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—৪৬ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড, ৫ ও ১৬ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট, সেনাবাহিনী প্রধানের সুরক্ষা ইউনিট, ৪০ বিজিবি (বিডিআর হত্যা-পর্বে), এবং বঙ্গভবনের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়।
বিশেষ করে ২০০৯ সালের বিডিআর ট্র্যাজেডিতে ফুলবাড়িতে তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে ৪৫২ রাউন্ড গুলিবর্ষণের মুখোমুখি হন এবং একদিনের জন্য আটক থাকেন—একটি স্মরণীয় সাহসিকতার অধ্যায়।
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় অবদান
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে তিনি মোজাম্বিকে ONUMOZ মিশনে এবং ইরাক-কুয়েতে UNIKOM মিশনে অংশগ্রহণ করেন, যা তাকে একটি আন্তর্জাতিক পরিসরে শান্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত করেছে।
সিভিল সেক্টরে অবদান
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) প্রকল্পের অংশ হিসেবে ‘অপারেশন নবযাত্রা’-তে নেতৃত্ব দিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলায় সফলভাবে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে তিনি জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নেন।
শিক্ষাগত ও পারিবারিক জীবন
পটুয়াখালীর কালাইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ কাইয়ুম পরবর্তীতে বিএমএ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইএমবিএ (আন্তর্জাতিক ব্যবসা) ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ১৯৯৭ সালে শামীমা খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তিন সন্তানের জনক।
বিশ্বদর্শন
সরকারি ও ব্যক্তিগত সফরে তিনি মোট ১৯টি দেশ ভ্রমণ করেছেন, যার মধ্যে মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, কানাডা।
একজন সৈনিক থেকে গণতন্ত্রের সৈনিক হয়ে উঠার এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি একটি অনুপ্রেরণার গল্প—দেশের জন্য জীবন উৎসর্গের প্রতিশ্রুতির নতুন রূপ।