“আপনার আজকের সিদ্ধান্তই গড়ে দেবে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত”
ফারুক আহমেদ
ভূমিকা:
“একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করো” – এই প্রবাদটি শুধু কথার কথা নয়, বরং এক মহাসত্য।
ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় বিনিয়োগ করা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি ভবিষ্যতের শ্রেষ্ঠতম মূলধন গড়ে তোলার এক মহৎ উদ্যোগ।
আজকের বিশ্বের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাস্তবতায় সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো জ্ঞান।
সোনার খনি, তেলের খনি কিংবা অট্টালিকা আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু যে সম্পদ একবার অর্জিত হয়, এবং কোনোদিন হারায় না — সেটি হলো “শিক্ষা”!
তাই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় অর্থ খরচ করাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বিনিয়োগ বলা হয়।
বিশ্বের প্রখ্যাত দার্শনিক, কবি ও সাহিত্যিকরাও বারবার শিক্ষা বিনিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন। আসুন দেখি, তাঁরা কে কী বলেছেন:
বিশ্ববরেণ্য মনীষীদের অ্যারিস্টটল বলেন,
“Education is an ornament in prosperity and a refuge in adversity.” (সমৃদ্ধিতে শিক্ষা অলংকার, বিপদে আশ্রয়।)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন,
“শিক্ষাই মানুষের সত্যিকার মুক্তি দিতে পারে।”
নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন,
“Education is the most powerful weapon which you can use to change the world.” (শিক্ষাই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যা দিয়ে আপনি বিশ্ব পরিবর্তন করতে পারবেন।)
জর্জ ওয়াশিংটন কার্ভার বলেছেন,
“Education is the key to unlock the golden door of freedom.”(শিক্ষাই মুক্তির সোনালী দ্বার উন্মুক্ত করার চাবি।)
জন ডিউই বলেন, “Education is life itself.”
(শিক্ষাই হলো জীবন।)
এখান থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায় — সন্তানদের লেখাপড়ায় বিনিয়োগ কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি সময়োপযোগী ও মহৎ সিদ্ধান্ত।
লেখাপড়ায় বিনিয়োগ: পরিবারের, সমাজের ও জাতির জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে কিভাবে?
১. পরিবারের জন্য উপকারিতা:
•আর্থিক সচ্ছলতা: শিক্ষিত সন্তান ভবিষ্যতে পরিবারকে অর্থনৈতিক সুরক্ষা দিতে পারে।
•মানসিক শক্তি: শিক্ষিত সন্তান সংকটকালে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
•পারিবারিক মর্যাদা: শিক্ষিত সন্তান পরিবারের সম্মান বৃদ্ধি করে।
২. সমাজের জন্য উপকারিতা:
•সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন: শিক্ষিত জনগণ আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলে।
•অপরাধ হ্রাস: শিক্ষা নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করে।
•উদ্ভাবন ও সেবা: শিক্ষিত সমাজ নতুন নতুন উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেয়।
৩. জাতির জন্য উপকারিতা:
•টেকসই উন্নয়ন: শিক্ষিত জনগণ দেশকে উন্নত করে।
•বিশ্বে নেতৃত্ব: শিক্ষিত জাতি বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেয়।
•জাতীয় নিরাপত্তা: সুশিক্ষিত নাগরিকেরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
যারা শিক্ষায় বাজেট করেন না, তাদের পরিণতি:
•সম্পদের সঠিক ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা
•প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি
•পরিবারে দ্বন্দ্ব ও অশান্তি
•সমাজে অবজ্ঞা ও অপমান
•শেষ পর্যন্ত সম্পদ ও সম্মান উভয় হারিয়ে চরম দুঃখে পতন
শিক্ষাবিহীন উত্তরসূরি ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ংকর ফাঁদ তৈরি করে।
একটি শিক্ষণীয় গল্প: “দুই ভাইয়ের ভাগ্য”
একটি ছোট গ্রামে থাকত দুই ভাই — রবিউল আর স্বপন।
বাবা-মা বলতেন:
“ছেলেরা, যত জমি-জমা থাকুক, শিক্ষা ছাড়া কিছুই টিকবে না।”
রবিউল বাবার কথা শুনে পড়াশোনায় মন দিল।
আর স্বপন বলল:
“তুই বইখাতা নিয়া বস, আমি জমি চাষ করেই বড়লোক হইবো!”
রবিউল উচ্চশিক্ষা অর্জন করে সরকারি কর্মকর্তা হলো।
স্বপন চাষাবাদ করলেও অজ্ঞতার কারণে জমি হারালো, ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
শেষমেশ, স্বপন ভাইয়ের অফিসে কাজের খোঁজে গেল।
রবিউল তাকে বলল:
“জমি শেষ হতে পারে, টাকা হারাতে পারে, কিন্তু শিক্ষার শক্তি কখনো শেষ হয় না।”
এই গল্পটি আমাদের শিক্ষা দেয়:
“শিক্ষা ছাড়া কোনো স্থায়ী উন্নতি সম্ভব নয়!”
উপসংহার:
আজকের দিনে শুধু অর্থ বা সম্পদ দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়।টিকে থাকতে হলে, এগিয়ে যেতে হলে, নেতৃত্ব দিতে হলে প্রয়োজন জ্ঞান, দক্ষতা ও শিক্ষা।
তাই আসুন, জমি-সম্পদের আগে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা অর্জনের পথ উন্মুক্ত করি।
শুধু নিজের পরিবারের জন্য নয়, সমগ্র সমাজ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ করি।
“ছেলেমেয়ের লেখাপড়ায় বিনিয়োগই হোক আমাদের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ!”
আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি কী ভাবেন?
যদি আপনি বিশ্বাস করেন, ‘শিক্ষা-ই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ’ — তাহলে পোস্টটি শেয়ার করুন এবং মতামত জানান কমেন্টে!
লেখক: কলামিস্ট ও শিক্ষা সচেতন কর্মী, পেরেন্টস অ্যাট ফ্যাকাল্টি অফ মেডিসিন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
(সমাপ্তি)
লেখক: ফারুক আহমেদ, কলামিস্ট ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী